২৭ মার্চ, ২০১৭

তকদীর প্রসঙ্গে হাদীসে কুদসী।



ইসলাম ধর্মে তকদীরে বিশ্বাস স্থাপন করা ঈমানের অঙ্গ তকদীরের অর্থ এইযে, ভবিষ্যতে প্রত্যেক সৃষ্টির জীবনে কি ঘটিবে অনাদিকাল হইতে আল্লাহ্ তাআলা তাহা সুরক্ষিত ফলকে (লাওহে মাহফুজ) লিপিবদ্ধ করিয়া রাখিয়াছেন মানুষকে কাজ করার ইচ্ছা, আগ্রহ ও ক্ষমতা আল্লাহ্ দান করিয়াছেন কখন মানুষ কি কাজ করিবে তাহাও আল্লাহ্র জ্ঞানে রহিয়াছে ইহা আল্লাহ্র একটি বিধান কাজ করার ইচ্ছাশক্তি আল্লাহ্ প্রদত্ত হইলেও আল্লাহ্ মানুষকে ভাল-মন্দের জ্ঞান দান করিয়াছেন ও যুগে যুগে নবী-রাসূল প্রেরণ করিয়া সতর্ক করিয়াছেন সুতরাং মানুষের ইচ্ছাশক্তি প্রয়োগের কোন ক্ষমতা নাই ইহা বলা চলেনা; বরং ইহা বলা যায় যে, মানুষ আল্লাহ্র অনুমোদন ছাড়া যাহা ইচ্ছা করিতে পারেনা মানুষের ইচ্ছাশক্তি আছে, কিন্তু উহা আল্লাহ্র নিয়ন্ত্রণাধীন মানুষ যেমন সীমাবদ্ধ ক্ষমতা, সীমাবদ্ধ জ্ঞান এবং সীমাবদ্ধ গুণাবলীর অধিকারী, তেমনি তাহার ইচ্ছাশক্তি প্রয়োগের ক্ষমতাও সীমাবদ্ধ

তকদীরের দুইটি অংশ একটি হইল কদর অর্থাৎ আল্লাহ্র অমোঘ বিধান অনুসারে যে পরিণাম অবশ্যম্ভাবী অপরটি হইল কাযা- ঐ বিধান অনুযায়ী যাহা অবশ্যম্ভাবী, তাহা বাস্তবে ঘটা কিন্তু ইহার উভয়টিই আল্লাহ্ তাআলার নিয়ন্ত্রণাধীন

তকদীর ও ইচ্ছার স্বাধীনতা সম্বন্ধে মুসলিম চিন্তানায়কগণ দুই দলে বিভক্ত একদল মনে করেন, মানুষ ভাগ্যের হাতে একটি পুতুল বিশেষ, তাহার স্বাধীন ইচ্ছা বলিতে কিছুই নাই এই দলকে জাবরিয়া বলাহয় অপরদল মনে করেন, মানুষ ইচ্ছার বলে নিজের পছন্দ অনুযায়ী স্বীয় ভাগ্য গঠন করিতে পারে এই দলকে কাদরিয়া বলা হয় প্রকৃতপক্ষে এই দুইটি অভিমতই চরম

আসল কথা এই যে, মানুষ ভাগ্যের হাতে পুতুলও নয়, আর ইচ্ছানুযায়ী যেমন খুশি ভাগ্য সৃষ্টির ক্ষমতায় ক্ষমতাবানও নয় তকদীর হইতেছে আল্লাহ্র নির্ধারিত কতকগুলো প্রাকৃতিক আইন- যাহা বিশ্ব সৃষ্টির পূর্বেই আল্লাহ্ তাআলা নির্ধারণ করিয়াছেন আর সেই আইন অনুযায়ী প্রত্যেককেই স্বীয় ভাগ্য গড়িয়া তোলার সীমাবদ্ধ ক্ষমতাও প্রদান করিয়াছেন…………

নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সর্বপ্রথম যাহা সৃষ্টি করিয়াছেন উহা কলম তৎপর আল্লাহ্ বলিলেনলিখ”, কলম বলিল, “হে আমার প্রভু, কি লিখিব? আল্লাহ্ বলিলেন, “তকদীর লিখ, যাহা ছিল এবং অনন্তকাল পর্যন্ত যাহা ঘটিতে থাকিবেআবূ দাউদ তায়ালিসী উবাদাহ বিন সামিত (রাঃ)-এর সূত্রে এই হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন……………

নিশ্চয়ই আল্লাহ্ আদমকে সৃষ্টি করিলেন, তারপর তাহার পিঠ হইতে সন্তানদিগকে বাহির করিলেন এবং বলিলেন- “এইগুলি বেহেশতের জন্য-আর আমি কারও পরওয়া করি না, আর এইগুলি জাহান্নামের জন্য, আমি কোন কিছুর পরওয়া করি না তখন জিজ্ঞাসা করা হইল, “হে আল্লাহ্র রাসূল, আমরা কোন্ আশায় আমল করিব? “তিনি উত্তর করিলেন, “নির্ধারিত ভাগ্যস্থলে পৌঁছিবার আশায়জিয়া মাকদিসী ইহা আবদুর রহমান ইবনে কাতাদা আসলামী (রাঃ)-এর সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন

টীকা- তকদীরে দৃঢ় বিশ্বাস রাখার বিশেষ উপকারিতা আছে কেহই জানেনা তাহার ভাগ্যে কি আছে কিন্তু প্রত্যেক মুমিনই মহান আল্লাহ্র করুণায় বিশ্বাসী এবং এই বিশ্বাসের প্রেরণায় তাহার লিপিবদ্ধ সৌভাগ্যে পৌঁছিবার আশায় আপ্রাণ তদবীর করে তাহার অক্লান্ত চেষ্টা ও শ্রমের ফলে হয়ত বা আল্লাহ্ তাআলা তাহার প্রতি সন্তুষ্ট হইয়াযান এবং প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ীই তাহাকে সৌভাগ্যের অধিকারী করিয়া দেন বস্তুত তদবীরই তাকদীরে পৌঁছিবার সোপান 

-হাদীসে কুদসী পৃষ্ঠা-৪৪, ৪৫, ৪৬ ও ৪৯ সংকলনঃ আল্লামা মুহাম্মদ মাদানী অনুবাদঃ মোমতাজ উদ্দীন আহমদ ইসলামিক ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ

২২ মার্চ, ২০১৭

দেহের কোথায় তিল থাকলে কি হয়?



মানবদেহে তিলের অবস্থান থেকেও একজন মানুষের সম্পর্কে ধারনা করা যায়। কেউ হয়ত বলবেন, এটা একটি কুসংস্কার ছাড়া আর কিছু নয়। কিন্তু প্রাচীন সামুদ্রিক শাস্ত্রে দেহের কোথায় তিল থাকলে কি হয় তা বর্ণনা করা হয়েছে। দীর্ঘ গবেষণার পরেই প্রাচীন ভারতীয় পণ্ডিতেরা এই তত্ত্ব গ্রহন করেছেন। শরীরের কোনও বিশেষ অংশে তিল থাকলে আপনার সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায় অনেকটাই। তবে তিল যে শুধু আপনার শারীরিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে তা নয়। দেহের কোথায় তিল থাকলে কি হয় তা নিম্নে বর্ণনা করা হয়েছে-


যাদের হাতে তিল রয়েছে তারা চালাক চতুর হন। ডান হাতে তিল থাকলে তারা শক্তিশালী হন। আবার ডান হাতের পিছনে তিল থাকলে তারা ধনী হয়ে থাকেন। বাঁ হাতে তিল থাকলে সেই ব্যক্তি অনেক বেশি টাকা খরচ করেন। আবার বাঁ হাতের পিছনের দিকে তিল থাকলে সেই ব্যক্তি কৃপণ প্রকৃতির হয়ে থাকেন। যে ব্যক্তির ডান হাতে তিল থাকে তারা প্রতিষ্ঠিত ও বুদ্ধিমান হন। বাঁ হাতে তিল থাকলে তারা ঝগড়াটে স্বভাবের হন। যাদের তর্জনীতে তিল রয়েছে তারা বিদ্বান, ধনী ও গুণী হয়ে থাকেন। তারা বেশিরভাগ সময়েই শত্রু দ্বারা সমস্যায় জর্জরিত থাকেন। বৃদ্ধাঙ্গুলে যাদের তিল থাকে তারা কর্মঠ, সদ্ব্যলহার ও ন্যায়প্রিয় হন। মধ্যমায় তিল থাকলে ব্যক্তি সুখী হন। তাদের জীবন শান্তিতে কাটে৷ কনিষ্ঠ আঙুলে তিন থাকলে সেই ব্যক্তি জ্ঞানী, যশস্বী, ধনী ও অপরাজেয় হন।


পুরুষের শরীরের ডান দিকে ও পুরুষের শরীরের বাঁ দিকে তিল থাকলে তা শুভ হিসেবে মনে করা হয়। পণ্ডিতেরা জানিয়েছেন শরীরে ১২টির কম তিল থাকা শুভ।


যাদের ভ্রুতে তিল রয়েছে তাদের প্রায়ই ভ্রমণের যোগ রয়েছে৷ ডান ভ্রুতে তিল থাকলে কোনও ব্যক্তির দাম্পত্য জীবন সুখের হয়। বাঁচ ভ্রুর তিল দুখী দাম্পত্যের লক্ষণ।


মাথার মাঝখানে তিল নির্মল ভালসাবার প্রতীক। মাথার ডান দিকে তিল থাকলে তা কোনও বিষয়ে নৈপুণ্যের প্রতীক। আবার যাদের মাথার বাঁ দিকে তিল রয়েছে তারা অর্থের অপচয় করেন। মাথার ডান দিকে তিল ধন ও বুদ্ধির চিহ্ন। বাঁ দিকের তিল নিরাশাপূর্ণ জীবনের সূচক।


ডান চোখে তিল থাকলে ব্যক্তি উচ্চবিচার ধারা পোষণ করেন। বাঁ চোখের তিল যাদের রয়েছে তাদের ভাবনা চিন্তা তেমন উন্নত নয়। যাদের চোখের মণিতে তিল থাকে তারা সাধারণত ভাবুক প্রকৃতির হন।

চোখের পাতায় যাদের তিল রয়েছে তারা সাধারণত সংবেদনশীল হন। তবে যাদের ডানদিনেক চোখের পাতায় তিল রয়েছে তারা অন্যদের তুলনায় অতিরিক্ত সংবেদনশীল হয়ে থাকেন।


যাদের কানে তিল রয়েছে তাদের আয়ু অনেক বেশি থাকে।


নারী বা পুরুষের মুখমণ্ডলের আশেপাশে তিল তাদের সুখী ও ভদ্র হওয়ার ইঙ্গিত দেয়। মুখে তিল থাকলে ব্যক্তি ভাগ্যে ধনী হন ও তার জীবনসঙ্গী খুব সুখী হন।


নাকে তিল থাকলে ব্যক্তি প্রতিভাসম্পন্ন ও সুখী হন। যে নারীর নাকে তিল রয়েছে তারা সৌভাগ্যবতী হন।


যাদের ঠোঁটে তিল রয়েছে তাদের হৃদয়ে ভালবাসা ভরপুর। তবে ঠোঁটের নীচে তিল থাকলে সে ব্যক্তির জীবনে দারিদ্র বিরাজ করে।


গালে লাল তিল থাকা শুভ৷ তবে গালে কোলে তিল অর্থহীনতার প্রতীক। কিন্তু ডান গালে তিল থাকলে ব্যক্তি ধনী হন।


যে নারীর থুতনিতে তিল রয়েছে তারা সহজে লোকের সঙ্গে মেলামেশা করতে পারেননা। তারা সাধারণত একটু রুক্ষ স্বভাবের হয়ে থাকেন।


ডান কাঁধে তিল থাকলে সেই ব্যক্তি দৃঢ়চেতা হন। যাদের বাঁ কাঁধে তিল রয়েছে তারা অল্পেতেই রেগে যান।


যে ব্যক্তির কোমরে তিল রয়েছে তাদের জীবনে সমস্যার আনাগোনা থাকে।


নারীদের ডান দিকে বুকে তিল থাকা শুভ। এমন পুরুষও ভাগ্যশালী হন। বাঁ দিকের বুকে তিল থাকলে নারী অসহযোগি হন। বুকের মাঝখানের তিল সিখী জীবনের ইঙ্গিত দেয়।


যে জাতকের পায়ে তিল রয়েছে তাদের জীবনে প্রচুর ভ্রমমের যোগ রয়েছে। ডান হাঁটুতে তিল থাকলে গৃহস্থজীবন সুখের হয়। বাঁ হাঁটুর তিল সংসারে অশান্তি ডেকে আনে।


যে ব্যক্তির পেটে তিল রয়েছে তারা খুব পেটুক প্রকৃতির হয়ে থাকেন। মিষ্টি এই ধরণের মানুষের অত্যন্ত প্রিয়। তবে এরা অন্য কাউকে নিজের টাকায় খাওয়াতে একেবারেই পছন্দ করেননা।

বি:দ্র:- আমার কথা হল, উপরোক্ত বর্ণনা সমূহের যেহেতু কোন বৈজ্ঞানিক যুক্তি নেই, হয়ত ক্ষেত্রবিশেষে মিলে যায়- তাই এসবের কোন নিশ্চয়তাও নেই। যদিও “বাঁ হাতে তিল থাকলে সেই ব্যক্তি অনেক বেশি টাকা খরচ করেন।” এই কথাটি আমার সাথে মিলেছে পুরোটাই।

৫ মার্চ, ২০১৭

রত্নবিদ্যা সম্পর্কে হাদীস


হাদীস শরীফে বর্ণিত হইয়াছে, যে ব্যাক্তি জমরূদ পাথরের কিংবা আকীক পাথরের আংটি পরিবে অথবা সঙ্গে রাখিবে, সে কখনও দরিদ্র হইবেনা সর্বদা প্রফুল্ল মনে কাল যাপন করিবে


হযরত সালমান ফারসী(রাঃ) হইতে হযরত রসূল(সাঃ) এর এইরূপ ১০টি হাদীস বর্ণিত হইয়াছে, যদ্বারা মানুষ ধনী সৌভাগ্যশালী হইতে পারে তন্মধ্যে প্রথম দুইটি- () মাতা-পিতার সহিত সদ্ব্যবহার করা () আকীক পাথরের আংটি আঙ্গুলে পরিধান করা

হাদীস সূত্রঃ- নেয়ামূল কোরআন-৫৩ পৃষ্ঠা, দ্বাবিংশ সংস্করণ, রহমানিয়া লাইব্রেরী, ঢাকা