২১ মার্চ, ২০১৩
১১ মার্চ, ২০১৩
জ্যোতিষবিদ্যা কি করতে পারে এবং জ্যোতিষের সার্থকতা কি?
জ্যোতিষবিদ্যাকে শুধু এমন এক আয়নার সাথেই তুলনা করা যায় যাতে ভিতরের প্রকৃত মানুষটিকেই
শুধু নয়, তার সারা জীবনের সমস্ত ছবিটিই তাতে দেখা যায়। মানুষের দৈহিক গঠন, বৈশিষ্ট্য, মানসিকতা থেকে শুরু করে অনেক জিজ্ঞাসা বা কৌতুহলের উত্তর, জীবনের পথনির্দেশ, রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা এবং যাবতীয়
সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান জ্যোতিষবিদ্যা দিতে পারে। যেকোন রোগ বা সমস্যায়,
দুঃখ-হতাশা-যাতনায়, বিপদে বা দুঃশ্চিন্তায়, ব্যর্থতা বা শত্রুতায় যখন সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ, জ্যোতিষবিদ্যা তখনও সাহায্য করতে পারে দিক-নির্দেশনা দান করে। ভাগ্য গড়ে দিয়ে নয়। মানুষ নিজেই তার ভাগ্য গড়ে। জ্যোতিষবিদ্যা ভাগ্য গণনার বিষয় নয় এবং অনিবার্যতাকেও নির্ধারণ
করেনা, শুধুই সম্ভাবনাকে নির্ণয় করে মাত্র। অনিবার্য বিষয়ে একমাত্র মহান স্রষ্টাই সুনির্দিষ্ট জ্ঞান রাখেন, সৃষ্টির কেউই তাহা জানেননা, জানা সম্ভব নয়। প্রকৃত অর্থে জ্যোতিষবিদ্যায় বর্ণিত বৈশিষ্ট্য, ফলাফল বা শুভাশুভ পূর্বাভাস, ভবিষ্যদ্বাণী তথা অবধারিত
সত্য নয়; জন্মতারিখ, সময় ও স্থানে গ্রহাবস্থানের ভিত্তিতে কতিপয় সম্ভাবনার সমষ্টিমাত্র। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত
সমগ্র জীবনের সকল কথা লিপিবদ্ধ করার বিষয় নয়,
সম্ভবও নয়, এবং কোন মানুষের ক্ষেত্রেই
একই বয়সে একই সাথে সকল দোষ-গুণের সমাবেশ প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। তাছাড়া মানুষ তার ইচ্ছাশক্তি বলে সেসবের নিয়ন্ত্রণও করতে পারে। তবুও মানুষের জীবনের
অপেক্ষাকৃত অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলীর অধিকাংশেরই জবাব জ্যোতিষবিদ্যার মাধ্যমে পাওয়া
সম্ভব। যেসব জবাব বা বিষয় লিখা সম্ভব হয়না তাহাও বিশ্লেষণ করে বুঝে নেয়া যায়। চিকিৎসক বা মনোবিজ্ঞানী
যেখানে রোগ হলেই শুধু জানাতে পারে, তাও কত কত পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর; জ্যোতিষবিদ্যা সেখানে জন্মের পর পরই কেষ্ঠী রচনার মাধ্যমে লিখে দিয়ে থাকে কারো
সারাজীবনের সব রকম ফলাফল এবং সম্ভাব্য সমাধান! আগাম সতর্কতা পেয়ে মানুষ সেরকম ব্যবস্থা
গ্রহণ করলে অবশ্যই উপকৃত হবে। তাই বলা যায় জ্যোতিষ এক মানবকল্যাণকর বিদ্যা। আর যে বিদ্যা মানবকল্যাণ করে তার আবেদন কোনদিনই ফুরায়না, জ্যোতিষবিদ্যা হাজার হাজার বছর ধরে টিকে থেকে তার প্রমানই রাখছে।
যাক সেকথা, দৈহিক গঠন বলতে একজন মানুষের বাহ্যিক পরিচয় বুঝায়, যাতে থাকবে তার চেহারা, গড়ন, আকৃতি, বর্ণ ইত্যাদির বর্ণনা। পৃথিবীর সকল মানুষই এসব ব্যাপারে তাদের ভৌগলিক অবস্থান, আবহাওয়া, পরিবেশ, পরিস্থিতি, আর্থিক ও সামাজিক অবস্থা এবং দেশীয় নিজস্ব বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী
ভিন্ন ভিন্ন। প্রকৃতপক্ষে স্বভাব-চরিত্র বা প্রকৃতি দ্বারাই প্রতিটি মানুষকে চেনা যায়। যদিও একজন মানুষের স্বভাব-চরিত্রের সাথে আরেকজনের স্বভাব-চরিত্রের
ক্ষেত্র বিশেষে মিল থাকতে পারে। তবুও এ মিল দ্বারা দুজন মানুষকে আলাদাভাবে সনাক্ত করা যায়না
এমন নয়। প্রকৃত মানুষটিকে সনাক্ত করতে হলে তার সম্পূর্ণ প্রকৃতি সম্পর্কে জানতে হবে। আর এক্ষেত্রে জগতের প্রতিটি মানুষই ভিন্ন ভিন্ন। প্রতিটি মানুষকে আলাদা আলাদাভাবে বিশ্লেষণ করা কোন বিজ্ঞান, কোন শাস্ত্র বা কোন বিদ্যার পক্ষেই সম্ভব নয়। তবুও জ্যোতিষবিদ্যায় বর্ণিত রাশির প্রকৃতি বা স্বভাব-চরিত্র
বিশ্লেষণ- একজন মানুষকে চিনতে যথেষ্ট সাহায্য করতে পারে। বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য একজন মানুষকে অন্য মানুষদের থেকে আলাদা
করে। প্রত্যেক রাশিরই এমন
কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য থাকে যা সচরাচর অন্যান্য রাশিতে তেমন জোড়ালো ভাবে পাওয়া যায়না। প্রতিটি মানুষ তার
নিজস্ব মানসিকতা দ্বারাও চালিত হয়। মানসিকতাই নির্ধারণ করে মানুষটি কেমন হবে। আর তার ওপর নির্ভর করে সফলতা-ব্যর্থতা, সুখ-দুঃখ ইত্যাদির ভিত্তি। এই মানসিকতাও মানুষের জন্মগত প্রাপ্তি। আর প্রত্যেক রাশির মানুষের মানসিকতাও বর্ণিত হয় রাশিতে। তদোপরি মানবজীবন মানেই দোষ-গুণের সমাবেশ। সবচেয়ে খারাপ লোকটিরও কিছুনা কিছু ভাল গুণ থাকতে পারে। গুণ আছে বলেই মানুষ সৃষ্টির সেরা প্রাণী। জগতের কোন মানুষই তথা কোন রাশির মানুষই ত্রুটি-বিচ্যুতির উর্ধ্বে
নয়। তবে একটু চেষ্টা করলেই
অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি এড়ানো যায়। উল্লেখ্যযে, একই সাথে সকল ত্রুটি-বিচ্যুতি একই সময়ে একজনের মধ্যে পাওয়া যাবে
এমন কোন কথা নেই। এসব ব্যাপারে জ্যোতিষবিদ্যা পূঙ্খানুপূঙ্খ বিশ্লেষণমূলক বর্ণনা করতে পারে, এবং একজন অভিজ্ঞ জ্যোতিষী এইসকল ত্রুটি-বিচ্যুতি
বিশ্লেষণ করে সেসব এড়ানোর পরামর্শও দিতে পারেন।
স্নেহ-মায়া-মমতা সমগ্র প্রাণীকুলে এক অপরিহার্য বিষয়। প্রাণীকুলের যেদিকে তাকাই প্রায় সর্বত্রই তার দেখা মেলে। তা না হলে প্রাণীজগতে বংশবৃদ্ধি ঘটতনা, তথা জগত টিকে থাকত না। কিন্তু, সকল প্রাণীর স্নেহ-মায়া-মমতার প্রকাশ ও তার মাত্রা একরকম নয়। সকল মানুষের ক্ষেত্রেতো
নয়ই, বরং বলা চলে মানুষের স্নেহ-মায়া-মমতার প্রকাশভঙ্গী ও তার মাত্রা
অত্যন্ত বৈচিত্র্যময়। এমনকি প্রতিটি মানুষের জীবনে জন্মগত ভাবেই প্রেম-ভালবাসা ও আবেগের একটি নিজস্ব
ধরন থাকে। তার প্রকাশভঙ্গীর একটি নিজস্ব প্যাটার্ন থাকে। হতেপারে তার প্রেম-ভালবাসা ও আবেগের মাত্রার কিংবা গভীরতার পার্থক্য। এ ছাড়াও জীবনের এক
অপরিহার্য জৈবিক বিষয় রোমান্স ও যৌনতা। এটি সমগ্র প্রাণীকুলে বংশবৃদ্ধির প্রক্রিয়া হিসেবে প্রবহমান। মানব জীবনেও তার কার্যকারীতা
একইরকম, কিন্তু তার প্রকাশ প্রাণীকুলের অন্যান্যের মত নয়। আবার প্রতিটি মানুষের ইন্দ্রিয়ানুভূতির এ ব্যাপারটির তীব্রতা, গভীরতা, কামনা, বাসনার মাত্রা ভিন্ন ভিন্ন। এ বিষয়ে প্রত্যেকেরই নিজস্ব একটি বৈশিষ্ট্য আছে। থাকতে পারে নিজস্ব রুচী ও বৈচিত্র্যময়তা। এসব ব্যাপারেও জ্যোতিষবিদ্যা পূঙ্খানুপূঙ্খ বিশ্লেষণমূলক বর্ণনা
করতে পারে, এবং সহায়ক পরামর্শ দিতে পারে।
বিয়ে ও দাম্পত্য সম্পর্ক মানব জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এ অধ্যায়ের বর্ণনা ব্যতীত মানব জীবনচিত্র অসম্পূর্ণ। একজন মানুষের জীবনে একটি বড় অংশ জুড়ে থাকে তার ঘর-সংসার ও পরিবার। গৃহ তথা পারিবারিক
জীবনে একজন মানুষ তার অন্তর্নিহিত দোষ, গুণ, মানসিকতা, চিন্তাধারা, স্বভাব-চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য দ্বারা অন্যান্যদের সাথে পারস্পরিক
সম্পর্ক গড়ে তোলে। এই সম্পর্কের ওপর নির্ভর করে মানব জীবনে সুখ, হাসি, আনন্দ বা দুঃখ, বেদনা, হতাশা এবং সমৃদ্ধি, সাফল্য বা ব্যর্থতা ইত্যাদি। পুরুষ এবং স্বামী হিসেবে প্রতিটি পুরুষের ব্যক্তিত্ব, পছন্দ-অপছন্দ, রুচীবোধ, মানসিকতা যেমন ভিন্ন ভিন্ন; তেমনি নারী এবং স্ত্রী
হিসেবেও প্রতিটি নারীর নিজস্ব একটি বৈশিষ্ট্য আছে। এর উপর নির্ভর করে দাম্পত্য জীবনের সুখ-শান্তি-সাফল্য সহ আরও
অনেক কিছু। এসব ব্যাপারেও জ্যোতিষবিদ্যার পূঙ্খানুপূঙ্খ বিশ্লেষণমূলক বর্ণনা ও পরামর্শ মানুষের
কল্যাণ করতে পারে।
বিদ্যা-শিক্ষা-জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাই মানুষকে সভ্য মানুষরূপে প্রতিষ্ঠিত করেছে। মানুষের উজ্জ্বল ভবিষ্যত গড়ায় তার অবদান অপরীসীম বলে আজকের দুনিয়ায়
তা অপরিহার্য বিষয় হিসেবে গণ্য। প্রতিটি মানুষের মেধা ও মননশক্তি যেমন ভিন্ন ভিন্ন, তেমনি বিদ্যা-শিক্ষা-জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার ব্যাপারেও পছন্দ-অপছন্দ নিজস্ব। তা ছাড়া পেশা-জীবিকা ও কর্ম ব্যতীত কোন জীবনচিত্র কল্পনা করা
যায়না। বরং জীবনের এক উল্লেখযোগ্য অংশ এটি। জীবনের স্রোতধারায় তার ভূমিকা বিরাট। জীবনের সার্থকতা ও ব্যর্থতা তার ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল। উপযুক্ত পেশা বাছাই সেজন্য খুবই জরুরী। এসব ছাড়াও অর্থ-সম্পদ মানব জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মানবজীবন ধারনের সবক্ষেত্রে অর্থের প্রয়োজন। তাই মানবজীবনের আর্থিকক্ষেত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু সকলের আর্থিক সম্ভাবনা একরকম নয়, বরং বলাচলে জীবনের মতই তা বৈচিত্র্যময়। এসব ব্যাপারেও জ্যোতিষবিদ্যার পূঙ্খানুপূঙ্খ বিশ্লেষণমূলক বর্ণনা
ও পরামর্শ মানুষের কল্যাণ করে থাকে নিঃসন্দেহে।
মানুষ সতর্ক হলে, সচেতন থাকলে এবং সংযম,
নিয়ম-নীতি ও পরামর্শ-অবগতি মেনে চললে অনেক
রোগব্যাধি, বিপদ বা দূর্ঘটনাকে এড়িয়ে যথাসম্ভব স্বাস্থ্যসম্মত, সুস্থ্য ও নিরাপদ জীবন যাপন করতে পারে। তাছাড়া ক্রীড়া বা বিনোদনও মানবজীবনের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তবে এসব ব্যাপারে প্রত্যেকের
অভিলাষ তার নিজের মত। সবাই সবরকম খেলাধূলা বা সবরকম বিনোদন পছন্দ করেনা। প্রত্যেকের পছন্দ-অপছন্দই ভিন্ন ভিন্ন। আবার অনেক খেলাধূলার সাথে শারীরিক সামর্থের ব্যাপারও জড়িত। তেমনি অনেক বিনোদনের সাথে মানসিকতা, রুচীবোধ এবং আর্থিক সামর্থের ব্যাপারটিও জড়িত। এসকল ব্যাপারেও জ্যোতিষবিদ্যা পূঙ্খানুপূঙ্খভাবে সম্ভাবনা বিশ্লেষণ
করে সতর্কতা সহ সহায়ক পরামর্শ দিতে পারে।
শৈশবেই মানবজীবনের ভিত্তি রচিত হয় বলে এ বয়সটি মানবজীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
সময়। সবার উচিত শৈশবেই তাদের
প্রিয়জনদের রাশি-লগ্ন জেনে নিয়ে সে অনুসারে তাদের দোষনীয় বৈশিষ্ট্যগুলি ঝেড়ে ফেলে শুভ
গুনাবলীগুলির আরো বিকাশ ঘটিয়ে সার্থক জীবন গঠনে সহায়তা করা। তবেই জীবনকে সুখ ও সাফল্যে ভরপুর করে উপভোগ করা যায়। নতুবা দুঃখ-হতাশা-বেদনা-লাঞ্ছনা-গঞ্জনা চিরসাথী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। শৈশবেই যার জীবনের দিক-নির্দেশনা গঠিত হয় তার জীবন ব্যর্থ হওয়ার
কথা নয়, বরং যারা দিক-নির্দেশনাহীন তারাই ব্যর্থতার যন্ত্রনা ভোগ করে। শৈশবের দিক-নির্দেশনাপূর্ণ
জীবন গঠনেই জ্যোতিষবিদ্যার আবেদন বেশি, এবং আমি মনেকরি জ্যোতিষবিদ্যার সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্যতাও এখানেই।
জীবন যেহেতু বহমান নদীর মতই, তাই কোথাও বাঁক, কোথাও সমান্তরাল, কোথাওবা প্রচন্ড উত্তাল,
কোথাওবা শান্ত, নদীর মতই জীবনের ধারা বয়ে চলে আমৃত্যু। এখানেও জোয়ার-ভাটা আছে,
আছে ভাঙ্গা-গড়া। সুখ-দুঃখ, ভাল-মন্দ মিলিয়েই মানুষের জীবন। এ গুলো কখনো কারো জীবনে নিরবচ্ছিন্ন হয়না। এসব ব্যাপারেও জ্যোতিষবিদ্যার পূঙ্খানুপূঙ্খ বিশ্লেষণমূলক বর্ণনা
ও পরামর্শ যে মানুষের কল্যাণ করে থাকে তাতে কোন সন্দেহ
নেই।
মানুষ সমাজবদ্ধ জীবন যাপন করে বলেই অন্যান্যদের সাথে তার পারস্পরিক সম্পর্ক গড়তে
হয়। এ পারস্পরিক সম্পর্কের
ওপর নির্ভর করে সমঝোতা ও সুখ-শান্তি সহ অনেক কিছু। সকলের সাথে সকলের ভালো মিল হয়না বা ব্যক্তিত্বের সংঘাত দেখা
দেয়, আবার কারো সাথে কারো ভাল মিল হতে পারে। কার সাথে কার সম্পর্ক কেমন হবে পূর্ব থেকে ধারণা নিয়ে যদি সম্পর্ক
স্থাপন করা যায়, তবে অনেক ঝামেলা, ভুল বুঝাবুঝি, বিশৃঙ্খলা, অশান্তি, ইত্যাদি সমস্যাগুলো যথেষ্ট পরিমানে যেমন এড়ানো যায়; তেমনি অনুকুল রাশির লোকের সাথে সম্পর্কে কার্যকর সুফল পাওয়া যায়। এ ব্যাপারেও জ্যোতিষবিদ্যা প্রায় নির্ভূল দিক-নির্দেশনাপূর্ণ
পরামর্শ সহ সম্ভাবনা বিশ্লেষণ করে থাকে।
সর্বোপরি জ্যোতিষবিদ্যার মাধ্যমে সম্ভাব্য জীবনচিত্র জানা যায়। এ জানার সার্থকতা তখনই পাওয়া যাবে, যখন মানুষ জ্যোতিষের পরামর্শ ও অবগতি সম্পূর্ণ মেনে চলবে, তথা শুভাশুভ দিন-তারিখ-সংখ্যানুযায়ী পদক্ষেপ নিবে এবং গ্রহরত্ন-রং-ধাতূ ব্যবহার করে শুভফল লাভ করবে। এছাড়াও তার দোষ-ত্রুটিগুলো শুধরে শুভ ও কল্যাণকর গুণগুলোর আরো জোড়ালোভাবে বিকাশ ঘটাতে সক্ষম
হবে এবং সম্ভাব্য ঝামেলা, অশান্তি, রোগ-ব্যাধি, বিপদ বা ক্ষতিকে এড়িয়ে নির্ঝঞ্ঝাট, শান্তিময়, নিরোগ, স্বাস্থ্যপূর্ণ, সুখী, সুন্দর ও সাফল্যময় জীবন গঠনে সমর্থ হবে। আর এসব ব্যাপারে সফলতা অর্জনে সঠিক পরামর্শ জ্যোতিষবিদ্যা দিতে
পারে বলেই জ্যোতিষের সার্থকতা।
১৭ ফেব, ২০১৩
ভবিষ্যদ্বাণীর সাথে তাকদীরের কোন সম্পর্ক নেই এবং ভবিষ্যদ্বাণী, ভবিষ্যদ্বক্তা, ভবিষ্যদ্বাণীর পদ্ধতি।
কথাটি দৈববাণী (Prophecy) নাকি ভবিষ্যদ্বাণী (Prediction) কোনটি বেশি সঠিক প্রথমে তা নির্ণিত হওয়া উচিত। Edgar
Cayce I Ching আমার মতে দৈববাণী শব্দটির সাথে ধর্মের সম্পর্ক আছে আর ভবিষ্যদ্বাণী শব্দটি পার্থিব, তাই ভবিষ্যদ্বাণী শব্দটিই বেশি গ্রহনযোগ্য। আর এই শব্দটি সুপ্রাচীনকাল থেকেই প্রচলিত। দৈববাণী বললে বুঝায় দৈব বা অজ্ঞাত অদৃশ্য কোন সূত্র থেকে প্রাপ্ত কোন বাণী, আর ভবিষ্যদ্বাণী শব্দটির কাজটি আমরা বুঝি যে, কোন বিষয়ে আগাম মন্তব্য করা। কিন্তু কিভাবে এই কাজটি সম্পাদিত হয় তা হয়ত সকলে বুঝিনা। তাই এ বিষয়ে কৌতুহল থাকাটাই স্বাভাবিক। এই কৌতুহল নিবৃত্তের প্রয়াশে বিভিন্ন বই পত্র-পত্রিকা মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যসূত্রে বর্ণিত বিষয়াবলীর আলোকে এই আলোচনা।
যদি কেউ আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপনাস্ত্রের গতিপথ বা পরের দিনের আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলতে পারে তাকে কি ভবিষ্যদ্বক্তা বলা যায় ? না বলা যায়না। কারন, বিজ্ঞানের বদৌলতে প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় কম্পিউটার এখন তা বলে দেয় বলে আমাদের শব্দ ব্যবহারেও যুগোপযোগী পরিবর্তন এসেছে। আর এই পরিবর্তনের ফলেই হয়ত ভবিষ্যদ্বাণী করা নিয়ে আজ আর কেউ তেমন প্রচেষ্টা চালাচ্ছেনা। কিন্তু একদিন ভবিষ্যদ্বক্তারা সারা পৃথিবী ব্যাপী সুপরিচিত ছিলেন, সমাদৃত ছিলেন। তাদের ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে সারা পৃথিবী ব্যাপী তোলপাড় হয়েছে। আমাদের কৌতুহল কিভাবে তারা সেসব করেছেন ?
এ যাবত জানা ব্যাপার গুলির মধ্যে ধর্মীয় ব্যাপার গুলি অপার্থিব তথা দৈব এবং তা নিয়ে আমি কোন আলোচনায় যাবনা, কেননা অপার্থিব বিষয় নিয়ে এই আলোচনা নয়। এর বাহিরে যে ব্যাপার গুলি জানা যায়, যেসব ভবিষ্যদ্বাণী বা ভবিষ্যদ্বক্তার কথা জানা যায়, তারা কিভাবে সেইসব ভবিষ্যদ্বাণী করতেন আলোচনার বিষয় মূলতঃ তাহা।
সর্বপ্রথম কথা হল- ইসলাম ধর্মে ভবিষ্যদ্বাণী করা হারাম বা নিষিদ্ধ। ইসলামী বিশ্বাস মতে ভবিষ্যৎ একমাত্র আল্লাহ্ তায়ালাই জানেন, কোন সৃষ্টির পক্ষেই তাহা জানা সম্ভব নয়। আমিও তাতে সম্পূর্ণ বিশ্বাস করি এবং একমত। প্রশ্ন হতে পারে, তাহলে ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে, ভবিষ্যদ্বক্তা নিয়ে কথা হচ্ছে কেন ? কথা হচ্ছে এ জন্য যে, এ বিষয়টি সবার কাছে পরিষ্কার নয় যে (ধর্মীয় ভাবে) যেটিকে ভবিষ্যদ্বাণী বলা হচ্ছে তা মূলতঃ মানুষের তাকদীরের অংশবিশেষ, একশ্রেণীর ভবিষ্যদ্বক্তা হয়ত তাহাই প্রতিফলিত করতে চেয়েছেন, কিন্তু তা ঠিক নয়, সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারনামাত্র। সাধারণ মানুষও অজ্ঞতাবশতঃ তা বিশ্বাস করে ঈমানহারিয়েছেন। ভবিষ্যদ্বক্তারা হয়ত সাময়িক লাভবান হয়েছেন এবং তাদের অনেক ভবিষ্যদ্বাণীও হয়ত ফলেছে। কিন্তু, কোন ভবিষ্যদ্বক্তার কোন ভবিষ্যদ্বাণীইযে “লাউহে মাহফুজে সংরক্ষিত তাকদীর” নয়, বরং একটি অতিন্দ্রীয় উপলব্দিমাত্র (Extra Sensory Perception) সেটি প্রমান করার জন্যই এই আলোচনার অবতারনা।
এ জন্যই জানতে হবে তারা কিভাবে সেইসব ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন ? আমি এ সকল বিষয়ে যতটুকু পড়েছি জেনেছি ভাবনা চিন্তা করে পেয়েছি তাতে দেখেছি, বিভিন্ন জন বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। কেউ কেউ দৈববাণী অর্জনের অধিবেশন (Prophetic Session) এর মাধ্যমে, কেউ কেউ স্বপ্নে অগ্রজ্ঞান (Precognitive) অর্জনের মাধ্যমে, কেউ কেউ অন্তর্দৃষ্টির (Vision) মাধ্যমে, কেউ কেউ রহস্যোদ্ঘাটনের (Revelation) মাধ্যমে, কেউ কেউ মোহাবস্থার (Trance) মাধ্যমে, কেউ কেউ আত্মিকপাঠের (Psychic Reading) মাধ্যমে মোহাবস্থায় গিয়ে, কেউ কেউ দৃষ্টিভ্রমের মাধ্যমে, কেউ কেউ আত্মপ্ররোচিত ভাবে মোহাবস্থায় গিয়ে, আবার কেউবা মন জানাজানির (Telepathy) মাধ্যমে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। আরেকটি শ্রেণী ছিল শয়তানের পূজারী তান্ত্রিক ভবিষ্যদ্বক্তা যারা শয়তানের সাহায্যে এ কাজটি করত। এ সবের কোনটির সাথেই লাউহে মাহফুজে সংরক্ষিত তাকদীরের কোনই সম্পর্ক ছিলনা। কেউ তা দাবীও করেনি।
যেমন,- ষষ্ঠদশ শতাব্দীর ফরাসী দার্শনিক চিকিৎসক ও বিখ্যাত ভবিষ্যদ্বক্তা মাইকেল ডি নস্ত্রাদামাস (Michel de Nostradamus) “সেঞ্চুরী” নামক পুস্তকে ৯৪২টি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। মোট ১০টি সেঞ্চুরী ছিল। ৭ম টিতে ৪২টি, বাকী ৯টিতে ১০০টি করে ভবিষ্যদ্বাণী ছিল। আর সেগুলি সবই ছিল ছন্দাকারে রচিত। জুলিয়ান ক্যালেণ্ডার অনুযায়ী ১৫০৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর এবং জর্জিয়ান ক্যালেণ্ডার অনুযায়ী ২৩ ডিসেম্বর দূপুরে ফ্রান্সের সেইন্ট রেমি ডি প্রোভেনস (St. Remy de Provence) এ নস্ত্রাদামাসের জন্ম এবং ১ জুলাই ১৫৫৬ (সন নিয়ে মতভেদ আছে) নিজ ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী তার মৃত্যু হয়।
নস্ত্রাদামাস যে পদ্ধতি অনুসরন করে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন- সেটি ছিল মোহাবস্থা। এ কাজে তিনি তামার তেপায়ার ওপরে বসানো এক গামলা পানির প্রতি মনোনিবেশ করতেন। এ ব্যবস্থাকে আত্মপ্ররোচিত মোহাবস্থা বলা যেতে পারে। মোহগ্রস্ত অবস্থায় নস্ত্রাদামাস সেঞ্চুরীর পদ্য গুলি লিখেন। প্রাচীন ভবিষ্যদ্বক্তা ডেলফিক ওরাকল আর নস্ত্রাদামাসের পদ্ধতি একই ছিল।
নস্ত্রাদামাসের জন্মের পূর্বে ফ্রান্সে লুক গরিক নামে একজন ছিলেন এবং দ্বাদশ শতাব্দীর আইরিশ ভবিষ্যদ্বক্তা ম্যালাচি মোহাবস্থায় ভবিষ্যদ্বাণী করতেন। অতীতে গ্রীক ভবিষ্যদ্বক্তা ওরাকল অব ব্রাঞ্চাস এবং চতুর্থ শতাব্দীর নব্য প্লেটোবাদী ইয়ামব্লিকাস (Iamblichus) এর পদ্ধতি অনুযায়ী কাজ করতেন নস্ত্রাদামাস। অতি সাম্প্রতিক অ্যালিয়েস্টার ক্রাউলিও মোহাবস্থায় ভবিষ্যদ্বাণী করতেন। ইতিহাসে আরো বহু নাম পাওয়া যাবে যারা মোহাবস্থায় ভবিষ্যদ্বাণী করতেন। এখনও অঞ্চল বিশেষে শোনা যায় কেউ কেউ এ পদ্ধতিতে কাজ করেন।
ভবিষ্যদ্বক্তাদের কারো কারো রোগ নির্ণয় ও তার নিরাময় করারও ক্ষমতা ছিল। বিশেষকরে নস্ত্রাদামাসের। নস্ত্রাদামাসের আরও একটি বিশেষ ক্ষমতা ছিল (পিছন দিকে চলা) ভবিষ্যদ্বাণী করা। যা তার জীবদ্দশায় বা পূর্বে ঘটেছে। এ জন্য নস্ত্রাদামাসই সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ভবিষ্যদ্বক্তা। আজও নস্ত্রাদামাসকে নিয়ে লেখালেখি বা গবেষণার শেষ নেই।
সাম্প্রতিক কালের আরেকজন বিশ্ববিখ্যাত আমেরিকান ভবিষ্যদ্বক্তা মিসেস জিন ডিকসন, তিনিই টেলিপ্যাথিকে জনপ্রিয়তায় এনেছেন। এটি একটি মন জানাজানির পদ্ধতি। তিনি অন্তর্দৃষ্টি এবং রহস্যোদ্ঘাটন নিয়ে কাজ করেন। এই দুটোকে আলাদাভাবে চিহ্নিতও করেছেন তিনি। পরেরটি অবশ্যম্ভাবী, প্রথমটি নয়। তবে দুটোই ভবিষ্যত বলা।
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)