২১ মার্চ, ২০১৩

রং বা বর্ণ কি এবং জ্যোতিষবিদ্যার সাথে সম্পর্ক?


সূর্যের আলোক বর্ণালীবিক্ষণ যন্ত্রের (Color Prism) মাধ্যমে বিশ্লেষণ করলে নিম্ন লিখিত সাতটি বর্ণের মিশ্রন দেখতে পাওয়া যায়- লাল (Red), কমলা (Orange), হলুদ (Yellow), সবুজ (Green), নীল (Blue), নীল-বেগুনী (Indigo) এবং বেগুনী (Violet)রংধনুর মধ্যেও এই রংগুলি দেখতে পাইএই বর্ণসমূহকে একত্রেসৌরবর্ণালী” (Spectrum) বলা হয়নিউটন এই সাতটি বর্ণকেই প্রাথমিক বা মৌলিক বর্ণ বলিয়া বিশ্বাস করিতেনমনে রাখিবার জন্য প্রত্যেক বর্ণের প্রথম অক্ষর লইয়া সংক্ষেপে একটি অর্থহীন শব্দ করা হয়- ভিবগিঅর (Vibgyor)সৌরবর্ণালীতে প্রকৃতিতে যত রং আছে সকলেরই সমাবেশ দেখা যায়অন্যান্য রং এই সাতটি বর্ণের মধ্যে দুই বা ততোধিক বর্ণের সংমিশ্রণের ফল


আসলে আলোক তরঙ্গের দৈর্ঘ্যের ভিত্তিতে চোখে বর্ণের সংবেদন উপন্ন করেআলোক তরঙ্গের দৈর্ঘ্য সচরাচর ৭০০ হইতে ৪০০ এম. এম. (Millimimron) এর ভিতর হইলে আমাদের অক্ষিপটে বর্ণ সংবেদন সৃষ্টি হয়যেমন, ৭০০ এম. এম. দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট আলোক তরঙ্গ লাল বর্ণের এবং ৪০০ এম. এম. দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট আলোক তরঙ্গ বেগুনী বর্ণের সংবেদন সৃষ্টি করেযদি এর বেশি বা কম হয় তবে সে বর্ণ আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়নাযেমন, লাল উজানী (Infra-Red) আলোকের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য হইল ৭০০ এম. এম. এর অধিক এবং বেগুনীপারের আলোক (Ultra-Violet) ও রঞ্জন-রশ্মির (X-Ray) আলোক তরঙ্গ দৈর্ঘ্য যথাক্রমে ৩০০ এম. এম. এবং ১০০ এম. এম.এজন্যই সেসব আমাদের দৃষ্টি বহির্ভূত


দৃষ্টিগত সংবেদন দুই প্রকারের- উজ্জ্বলতার সংবেদন (Sensation of Brightness) এবং বর্ণের সংবেদন (Sensation of Color)উজ্জ্বলতার সংবেদন বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের মিশ্র আলোক তরঙ্গ দ্বারা সৃষ্টি হয়, আর বিশুদ্ধ বর্ণের সংবেদন নির্ভর করে সমজাতীয় আলোক তরঙ্গ বা সমান দৈর্ঘ্যের আলোক তরঙ্গের উপরআলোক তরঙ্গ সমূহ যতবেশি সমজাতীয় হইবে বর্ণের সংবেদনও ততোধিক বিশুদ্ধ হইবেপ্রকৃতপক্ষে উজ্জ্বলতার সংবেদন এবং বর্ণের সংবেদনকে আমরা পৃথকভাবে দেখিতে পাইনাআলোক তরঙ্গের বৈষম্যের উপর বর্ণের উজ্জ্বলতার সংবেদন নির্ভর করে


তরঙ্গের দৈর্ঘ্যের উপর আলোকের প্রকৃতি নির্ভর করে বলে প্রত্যেক তরঙ্গের দৈর্ঘ্য অনুসারে এক একটি বর্ণ (Hue) পাওয়া যায়আর আলোক তরঙ্গের বিস্তৃতির (Amplitude) উপর বর্ণের উজ্জ্বলতা নির্ভর করেতরঙ্গ যত বিস্তৃত হয় বর্ণও তত উজ্জ্বল হয়বর্ণ অধিক মাত্রায় উজ্জ্বল হইতে হইতে সাদা হইয়া যায়, আবার অধিক মাত্রায় কমিতে কমিতে কালো হইয়া যায়অন্যভাবে বলা যায়- কোন রং না থাকলে সাদা, আর সব রং থাকলে হয় কালোতাহলে দেখা যাচ্ছে,- সাদা আর কালো আসলে কোন বর্ণ নয়বর্ণের সংবেদন মাত্রবর্ণের উজ্জ্বলতা শুধু তরঙ্গ বিস্তৃতির উপর নির্ভর করেনা, তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের উপরও নির্ভর করেযে সমস্ত তরঙ্গের দৈর্ঘ্য মাঝামাঝি সেই তরঙ্গের উপাদিত বর্ণ সবচেয়ে স্পষ্ট দেখায়যেমন, হলুদ বর্ণ লাল বা বেগুনী বর্ণের চেয়ে উজ্জ্বল মনে হয়


তরঙ্গের দৈর্ঘ্য অনুসারে এক একটি বর্ণ আমাদের চোখে পড়েতবে একটিমাত্র তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের আলোক আমাদের চোখে কমই পড়িয়া থাকেকেননা আমরা প্রায়ই তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের সংমিশ্রন পাইএই তরঙ্গগুলি পরস্পর সংমিশ্রিত হওয়ায় বর্ণের সংবেদন পৃথক হইয়া পড়েতরঙ্গ দৈর্ঘ্যের সংমিশ্রন হইতে বর্ণের সম্পৃক্তি (Saturation of Colors) জন্মেএই সংমিশ্রন যত অধিক হয় বর্ণটি ততই অসম্পৃক্ত (Unsaturated) হয়আর একটিমাত্র আলোক তরঙ্গের প্রতিফলন হইলে বর্ণটি সম্পৃক্ত (Saturated) হয়


যাই হউক, সৌরবর্ণালীর সাতটি রং ও সাদা এবং কালো এই নয়টি রংয়ের প্রতি জ্যোতিষবিদ্যায় উল্লেখিত নয়টি গ্রহ প্রভাব বিস্তার করে তথা আধিপত্য করেতাই জ্যোতিষে নির্দিষ্ট গ্রহের নির্দিষ্ট প্রভাবকারী রং আছেকোন গ্রহের প্রভাবকারী রং কোনটি অর্থা কার কোন রং শুভ বা অশুভ তা আগামীতে লিখার চেষ্টা করব