১১ জুন, ২০১৮

রাশিচক্র ও রাশি


আমরা সকলেই জানি পৃথিবী নিজ অক্ষের ওপর লাটিমের মতো সর্বদা নির্দিষ্ট গতিতে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে আবর্তিত (Rotation) হচ্ছেএই আবর্তনের ফলে দিবা-রাত্রি সংঘঠিত হয়। একে বলে পৃথিবীর আহ্নিক গতিএছাড়াও আপন অক্ষে আবর্তনের সাথে সাথে পৃথিবী একটি নির্দিষ্ট পথে সূর্যের চতুর্দিকে পরিক্রমণ (Revolution) করেসূর্যকে একবার পরিক্রমণ করতে পৃথিবীর যে সময় লাগে, তাকে সৌরবছর বলে। মহাকাশে পৃথিবীর চারপাশে সূর্যের আপাত বার্ষিক গতিপথকে বলা হয় রবিমার্গ
জ্যোতির্বিজ্ঞানে রাশিচক্র বলতে আকাশে সূর্যের আপাত গতিপথের (রবিমার্গের) ১২টি ভাগকে বোঝায়। এই আপাত গতিপথের নাম ভূকক্ষ। কারণ, প্রকৃতপক্ষে এটি সূর্যের চারদিকে পৃথিবীর কক্ষপথ। ভূকক্ষের খ-দ্রাঘিমাকে ১২টি ভাগে ভাগ করা হয় যার প্রতিটি ৩০ ডিগ্রি করে। এভাবে মোট ১২টি বিভাগ মিলে ৩৬০ ডিগ্রি তথা একটি বৃত্ত তৈরি করে। ভূকক্ষের সমতল থেকে ৮ হতে ৯ ডিগ্রি উত্তর বা দক্ষিণ (খ-অক্ষাংশ) পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলটিকে বলা হয় রাশিবন্ধনী (Zodiacal Belt)। চাঁদ এবং খালি চোখে দৃশ্যমান গ্রহগুলোর গতিপথও এই বন্ধনীর মধ্যে অবস্থান করে।

সূর্যের চারদিকে পৃথিবী আবর্তন করে বলে মনে হয় আকাশে সূর্য ভূকক্ষ (লাল বৃত্ত) বরাবর গতিশীল। ভূকক্ষ বিষুবরেখার (নীল) সাথে একটি কোণ তৈরি করে।


কিন্তু বাস্তবিক অর্থে রাশিচক্র কেবলই একটি খ-স্থানাংক ব্যবস্থা, আরও নির্দিষ্ট করে বললে এটি এক ধরণের ভূকক্ষীয় স্থানাংক ব্যবস্থা। প্রতিটি স্থানাংক ব্যবস্থা তৈরি করতে প্রয়োজন পড়ে একটি প্রসঙ্গ তল যেখান থেকে অক্ষাংশ গণনা শুরু হয়, এবং প্রসঙ্গ তলে এমন একটি প্রসঙ্গ বিন্দু যেখান থেকে দ্রাঘিমাংশ গণনা শুরু হয়। রাশিচক্রের ক্ষেত্রে সেই প্রসঙ্গ তল হচ্ছে ভূকক্ষ এবং ভূকক্ষের প্রসঙ্গ বিন্দুটি হচ্ছে মহাবিষুবের সময় সূর্যের অবস্থান।
যে তারামণ্ডলগুলোর মধ্য দিয়ে ভূকক্ষ অতিক্রম করে প্রাচীনকালের জ্ঞানীগণ রাশির বৈশিষ্ট্য এবং নক্ষত্রমন্ডলের দৃশ্যমান চিত্রানুযায়ী বিভিন্ন প্রাণী ও চিহ্ন সমন্বয়ে রাশি সমূহের কল্পিত নামকরন করেন। যেমন- মেষ, বৃষ, মিথুন, কর্কট, সিংহ, কন্যা, তুলা, বৃশ্চিক, ধনু, মকর, কুম্ভ ও মীন। এজন্য প্রাচীন গ্রিসের অধিবাসীরা রাশিচক্রকে “জোডিয়াকোস কিকলোস” বা “জন্তুদের বৃত্ত” বলতো। রাশিচক্রে মোট তারামণ্ডলের সংখ্যা এবং তাদের আকৃতি আগে নির্দিষ্ট করে বলা যেতো না, তবে গাণিতিক জ্যোতির্বিদ্যার গোড়াপত্তনের পর তারামণ্ডলগুলোর সীমানা নির্দিষ্ট করা হয়েছে। রাশিচক্রে মোট ১২টি তারামণ্ডল রয়েছে এবং আপাতভাবে বলা যায় সূর্য এই ১২টি তারামণ্ডলের মধ্য দিয়েই অতিক্রম করে। কোন মণ্ডলে সূর্য কতদিন থাকে তাও নির্দিষ্টভাবে জানা যায়। সায়ন পদ্ধতির রাশিফলে তা উল্লেখও করা হয়। সেই নির্দিষ্ট তারিখগুলিতে জন্মগ্রহন করলে তার সেই নির্দিষ্ট রাশি হয়।   
আসলে রাশি শব্দের সাধারন অর্থ- রাশ বা সমষ্টি, স্তুপ, সন্নিবেশিত, সন্নিকটে, একত্রে জড়োকৃত ইত্যাদি। যেমন- রাশি রাশি বললে অনেক গুলি বুঝায়। কিন্তু জ্যোতিষবিদ্যায় একত্রে কতগুলি জড়োকৃত নক্ষত্রের কল্পিত আকৃতি নিয়ে রাশি কথাটি এসেছে। অর্থাৎ অনেকগুলি তারকা সমন্বয়ে গঠিত বলেই রাশি নামকরন হয়েছে।
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে সংগৃহীত ছবি এবং তথ্যাদির সহায়তায় রচিত।