২৫ মার্চ, ২০১৮

জিনতত্ত্ব


জিনতত্ত্ব বা জেনেটিক্স হল জিন, বংশবৈশিষ্ট্য এবং এক জীব থেকে আরেক জীবের জন্মগত চারিত্রিক সাযুজ্য পার্থক্য সম্বন্ধীয় বিজ্ঞান। উইলিয়াম বেটসন ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে জেনেটিক্স শব্দটির প্রবর্তন করেন। জীবমাত্রই যে তার পিতা-মাতার বৈশিষ্ট্য আহরণ করে তা প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই মানুষের জানা এবং নির্বাচিত প্রজননের মাধ্যমে তারা শস্য গৃহপালিত পশুর মধ্যে কাঙ্খিত গুণাবলীর সমাবেশ ঘটিয়েছে। তবে বংশগতির মূলসূত্র অনুসন্ধানে অভীষ্ট আধুনিক জিনতত্ত্বের বয়স খুব বেশি নয়। ঊনবিংশ শতাব্দীতে অস্ট্রিয়ান ধর্মযাজক গ্রেগর মেন্ডেলের গবেষণার মধ্য দিয়ে এই বিজ্ঞানের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। [] তখনো মানুষ বংশগতির গাঠনিক ভিত্তি সম্বন্ধে খুব বেশি অবহিত ছিল না। তদসত্ত্বেও মেন্ডেল তাঁর পর্যবেক্ষণ থেকে ধারণা করেছিলেন পিতা-মাতা থেকে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য পরবর্তী প্রজন্মে সঞ্চারিত হয় বংশগতির কিছু বিচ্ছিন্ন একক দ্বারা, যাদের পবের্তীতে জিন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

জিন ডিএনএ নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করে। ডিএনএ হল এমন একটি অণু যা কিনা চারটি ভিন্ন প্রকৃতির নিউক্লিওটাইডে তৈরি, যাদের বিন্যাসই কোনো অর্গানিজমের জিনেটিক বৈশিষ্ট্যাদি নিঁর্ধারণ করে দেয়। ডিএনএ সাধারণতঃ দ্বি-সর্পিল তন্তুর ন্যায় বিন্যাসিত থাকে ; যেখানে কোন একটি নিউক্লিওটাইড অপর তন্তুতে অবস্থিত নিউক্লিওটাইডের পরিপূরক। প্রতিটি তন্তুই ডিএনএ প্রতিলিপিকরণের সময় তার পরিপূরক তন্তুর জন্যে ছাঁচ হিসাবে কাজ করে, যা কি-না উত্তরাধিকার সূত্রে জিন প্রতিলিপিকরণের ভৌত পদ্ধতি

জিনের নিউক্লিওটাইডের পরম্পরা অনুযায়ী জীবকোষ এমিনো এসিড তৈরি করে। এমিনো এসিড থেকে প্রোটিন উৎপন্ন হয়প্রোটিনে এমিনো এসিডের ক্রম আর জিনে নিউক্লিওটাইডের ক্রম অভিন্ন রকম হয়ে থাকে। নিউক্লিওটাইডের ক্রম আর এমিনো এসিডের ক্রমের এই সম্পর্ককে জিনেটিক কোড বলে। প্রোটিনে অবস্থিত এমিনো এসিড নির্ধারণ করে প্রোটিনের ত্রি-মাত্রিক গঠন কী-রূপ হবে; আর এর গঠন প্রোটিনের কাজ কী হবে তা নির্ধারণ করে। জিনে অবস্থিত ডিএনএ একটি ছোট্ট পরিবর্তন প্রোটিন গঠনকারী এমিনো এসিডের আকার কাজে বড় ধরণের পরিবর্তন সৃষ্টি করতে পারে, যা কিনা কোষ সম্পূর্ণ জীবদেহে নাটকীয় পরিবর্তন আনতে পারে

যদিও জীনতত্ত্ব কোন জীবের বাহ্যিক গঠন আচরণ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, জীনতত্ত্ব আর জীবসত্ত্বার অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে তার বৈশিষ্ট্য নির্ধারিত হয়। যেমন, যদিও জিন কোন ব্যক্তির উচ্চতা নির্ধারণ করে, তবু তার বাল্যকালের স্বাস্থ্য পুষ্টির ব্যাপারটিও এতে বড় প্রভাব ফেলে

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে