মানব আচরণ
যেসব
অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়াসমূহের দ্বারা
পরিচালিত হয়
প্রেষণা (Motivation) তাদের মধ্যে
অন্যতম। প্রেষণার দ্বারা
তাড়িত
হয়েই
মানুষ
কর্মে
লিপ্ত
হয়।
মানুষের বিচিত্র আচরণ
ও
কর্মতৎপরতার পেছনে
কোননা
কোন
ধরণের
প্রেষণা যুক্ত
থাকে।
মানুষকে তার
দৈনন্দিন জীবন
পরিচালনায় অসংখ্য
প্রেষণা তাড়িত
করে
থাকে।
যেমন-
ক্ষুধা, তৃষ্ণা,
যৌনকামনা, স্নেহ,
ভালবাসা, অভাব,
প্রত্যাশা, ইচ্ছা,
উদ্দেশ্য, লক্ষ্য,
আকাঙ্খা, চাহিদা,
প্রয়োজন, প্রতিশোধ, প্রতিষ্ঠালাভ, মর্যাদা অর্জন,
ক্ষমতালাভ, কৃতিত্ব অর্জন,
স্বীকৃতি, পদোন্নতি, পদমর্যাদা, স্বাধীনতা, সম্মান,
প্রতিপত্তি, আগ্রহ,
ব্যক্তিত্ব অর্জন,
যকৃতের
চাহিদা,
নিদ্রা,
কলহ,
খ্যাতি,
প্রবনতা, ঔৎসুক্যতা, দলবদ্ধতা, পিতৃত্ব বা
মাতৃত্বের চাহিদা,
নির্ভরশীলতা, সম্পর্ক স্থাপন,
প্রভাববিস্তার, উত্তেজিত আচরণ,
কাম্যতা, ভয়,
অপরাধবোধ, পরিহাস,
ঘৃণা,
বিস্মৃতি, ভুল-ত্রুটি প্রভৃতি। এই
ধরণের
অসংখ্য
অভ্যন্তরীণ চাহিদা
বা
তাড়না
আমাদেরকে লক্ষ্যের দিকে
ধাবিত
করে।
প্রকৃতপক্ষে প্রেষণা আছে
বলেই
মানুষ
সক্রিয
ও
সচেতন
হয়
এবং
জীবনকে
পরিচালনার উদ্যোগ
গ্রহন
করে।
প্রেষণা না
থাকলে
মানুষের জীবন
নির্জীব হযে
পড়তো।
সমগ্রজীবনব্যাপী বিভিন্ন লক্ষ্য
অর্জন
ও
সামগ্রীক অচরণে
কর্মশক্তি সরবরাহকারী এবং
তাগিদ
সৃষ্টিকারী শরীর
অভ্যন্তরীণ (মনস্তাত্ত্বিক প্রক্রিয়া) তাড়না
সৃষ্টিকেই প্রেষণা বলে
আখ্যায়িত করা
হয়।
প্রেষণা এমন
এক
চালিকাশক্তি যা
মানুষকে সমগ্রজীবনব্যাপী বিভিন্ন কাজে
এবং
আচরণে
উদ্বুদ্ধ করে
থাকে।
প্রেষণার কারনেই
মানবজীবন প্রাণচঞ্চল, কর্মময়
এবং
গতিশীলরূপ লাভ
করে।
আর
তাড়না
(Drive) হচ্ছে
শরীর
অভ্যন্তরীণ প্রয়োজন এবং
বাহ্যিক উদ্দীপনার প্রেক্ষিতে সৃষ্ট
একধরনের মনস্তাত্ত্বিক উদ্দীপনা।
মানবীয় প্রেষণার ক্ষেত্র ব্যাপক
ও
বিস্তৃত বলে
প্রেষণার শ্রেণীবিভাগ নিয়ে
মনোবিদদের মধ্যে
মতবেদ
থাকলেও
প্রেষণাকে প্রধানত দুই
ভাগে
ভাগ
করেছেন। এগুলো
হল
জৈবিক
প্রেষণা (Biological Motives) এবং সামাজিক প্রেষণা (Social Motives)। জৈবিক
প্রেষণা শারীরিক প্রয়োজন থেকে
সৃষ্টি
হয়
এবং
তা
তাৎক্ষণিকভাবে পূরণ
হওয়া
জরুরী।
যেমন-
ক্ষুধা,
তৃষ্ণা,
ইত্যাদি। জৈবিক
প্রেষণা জীবনধারনের জন্য
প্রয়োজনীয়। কিছু
কিছু
জৈবিক
প্রেষণা জন্মগতভাবেই লাভ
করে
আবার
কিছু
বয়োঃপ্রাপ্তির সাথে
সাথে
সৃষ্টি
হয়।
যেমন-
যৌনতা।
সামাজিক প্রেষণা কোন
কোন
ক্ষেত্রে জৈবিক
প্রেষণার সহায়ক
হিসেবে
কাজ
করলেও
সামাজিক প্রেষণা সামাজিক পরিবেশ,
সামাজিক চাহিদা
ও
পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে উদ্ভব
হয়।
এটি
প্রয়োজন ভিত্তিক হলেও
দেরী
হলেও
তেমন
সমস্যা
হয়না,
কারন
তা
জীবনধারনের জন্য
জরুরী
নয়।
সামাজিক প্রেষণা অসংখ্য
হলেও
তা
পূরণে
বহু
বিকল্প
বিদ্যমান থাকে,
এবং
একটি
পূরণ
হলে
আরেকটির সৃষ্টি
হয়।
এ
ছাড়াও
সামাজিক প্রেষণা ব্যক্তিবিশেষে ভিন্ন
ভিন্ন
হয়।
কেননা
দৈহিক,
মানসিক
ও
সামাজিক চাহিদাসমূহ প্রেষণার উৎস
হওয়ায়-
ব্যক্তি, সমাজ
ও
প্রাকৃতিক পরিবেশভেদে প্রেষণাও ভিন্ন
ভিন্ন।
ব্যক্তিগত চাহিদার ভিত্তিতে ব্যক্তিমনে একধরনের মানসিক
অবস্থার সৃষ্টি
হয়।
আর
এই
মানসিক
অবস্থা
তাড়না
হিসেবে
প্রেষণার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে।
তবে
মানুষ
বা
প্রাণী
শুধুমাত্র প্রেষিত আচরণই
করেনা,
কিছু
কিছু
প্রতিবর্তী আচরণও
করে।
যেমন-
তীব্র
আলোকে
চোখের
পাতা
বন্ধ
করা,
হাঁচি
দেয়া,
আগুনে
হাত
লাগামাত্র সরিয়ে
নেয়া
ইত্যাদি।
মানব আচরণের
শক্তিশালী নিয়ন্ত্রক হল
জৈবিক
ও
সামাজিক প্রেষণা। ক্ষুধা,
তৃষ্ণা
প্রভৃতি জৈবিক
ও
মূখ্য
প্রেষণাগুলো মানুষকে কর্মে
চালিত
করে।
তেমনি
পদমর্যাদা, আত্মপ্রতিষ্ঠা, স্বাধীনতা প্রভৃতি সামাজিক প্রেষণা মানুষের মধ্যে
কর্মপ্রেরণা সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষকে কর্মে
নিয়োজিত করে।
ক্ষুধার্ত হলে
আমরা
খাদ্য
গ্রহণ
করি,
তৃষ্ণার্ত হলে
পানি
পান
করি,
প্রয়োজনীয় মূহুর্তে প্রকৃতির ডাকে
সাড়া
দেই,
নিদ্রা
যাই,
যৌনতা
চরিতার্থ করি
এগুলি
জৈবিক
প্রেষণা। ভাল
রেজাল্ট করার
জন্য
ছাত্র-ছাত্রী আপ্রাণ চেষ্টা
চালায়,
সম্মান
ও
প্রতিপত্তি অর্জনের জন্য
একজন
কাজ
করে
যাচ্ছে
এগুলো
সামাজিক প্রেষণা সংশ্লিষ্ট আচরণ।
এভাবে
মানুষ
জীবনব্যাপী জৈবিক
ও
সামাজিক প্রেষণার তাগিদে
বিভিন্ন ধরনের
কাজ
করে
যাচ্ছে। মূলত
প্রত্যেক মানুষই
বিভিন্ন ধরনের
প্রেষণা চরিতার্থ করনের
জন্য
নির্দেশিত হয়ে
কাজ
করে
চলেছে
যার
সার্বিক রূপ
হচ্ছে
আচরণ।
সুতরাং
একথা
স্পষ্টভাবে বলা
যায়,
মানবীয়
আচরণের
অন্যতম
নির্ধারক হচ্ছে
প্রেষণা।
মানবীয় আচরণে
প্রভাববিস্তারকারী আর
এক
ধরনের
প্রেষণা হচ্ছে
অন্তর্নিহিত প্রেষণা, যে
প্রেষণা মানুষের একান্তই ব্যক্তিগত এবং
ব্যক্তিগত আচরণের
মাধ্যমেই তার
সন্তুষ্টি অর্জন
সম্ভব।
কোন
শিশু
আপনমনে
খেলা
করে,
কোন
কিশোর
বই
পড়ে
কিংবা
টিভি
দেখে
আনন্দ
ভোগ
করে
এ
ধরনের
প্রেষণা তাড়িত
উদাহরন।
আবার বাহ্যিক প্রেষণাও মানুষকে সুনাম
বা
পুরষ্কারের লোভে
বিশেষ
আচরণে
উদ্বুদ্ধ করে।
প্রেষণার তাগিদেই মানুষের মস্তিষ্ক এবং
শরীর
যেকোন
কাজ
করার
ক্ষমতা
বা
শক্তি
অর্জন
করে
যা
আচরণের
বহিঃপ্রকাশ।
মানবীয় আচরণ
শুধুমাত্র জৈবিক
ও
সামাজিক প্রয়োজন পূরণের
তাগিদেই সৃষ্টি
হয়না,
প্রকৃতপক্ষে মানবীয়
আচরণ
দ্বারা
নির্ধারিত হয়
শরীর
অভ্যন্তরীণ জৈবিক
প্রভাব
এবং
বাহ্যিক উদ্দীপনার পারস্পরিক ক্রিয়ার মাধ্যমে। জৈবিক
প্রেষণা চরিতার্থ করণে
আমরা
যে
আচরণ
করি
তা
সামাজিক শিক্ষা
ও
অভিজ্ঞতা দ্বারা
নিয়ন্ত্রিত হয়।
সার কথা
হল
প্রতিটি মানুষের আচরনের
পেছনে
প্রেষণা জড়িত।
প্রেষণার কারণেই
মানুষ
বৈচিত্র্যময় আচরণ
করে
থাকে।
আমরা
মানুষকে নানা
রূপে
দেখি।
নানা
পেশায়
দেখি।
নানা
রকম
মানসিকতার পরিচয়
পাই।
তাহলে
প্রশ্ন
হতে
পারে-
প্রেষণার পেছনে
কে
? আমার
উত্তর
হল-
ব্যক্তিত্ত্ব, জিন
তথা
গ্রহ-নাক্ষত্রিক প্রভাব। তার প্রমাণ- জ্যোতিষবিদ্যা কোন
শিশুর
জন্মস্থান, তারিখ
ও
সময়
বিশ্লেষণ করে
তার
সারাজীবনের প্রেষণাতাড়িত আচরণ
ও
তার
ফলাফল
বলে
দিতে
পারে।
আর
কোন
বিদ্যা
নেই
যে
তা
পারে
জ্যোতিষবিদ্যা ব্যাতীত।