জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি জীবনের
প্রতিটি মূহূর্তেই মানুষ নিজেকে, নিজের পরিমন্ডলকে, সময়কে এককথায় সবকিছুকে একমাত্র
সংখ্যা দ্বারাই পরিচিত করে। আর তা করে প্রায় অসচেতন থেকেই। যেমন,- কারোনাম,
স্থানেরনাম, বিষয়েরনাম বা দিন, তারিখ, সময় ইত্যাদি যা কিছুই বলিনা কেন সব কিছুর
মাঝেই লুকিয়ে আছে সংখ্যা! কিভাবে? সংখ্যার সেই আধিভৌতিক দিক নিয়েই আলোচনা করে
সংখ্যাতত্ত্ববিদ্যা। সভ্যতা বিকাশের সাথে সাথে মানুষ স্পষ্টতঃ অনুভব করেছে যে,
জগতের সকল কর্মকান্ডই সংখ্যা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এই অনুভব থেকে অনুসন্ধিৎসা, কৌতুহল
ও আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়ে গবেষণা, চর্চ্চা এবং অনুশিলীত হয়ে আধুনিক সংখ্যাতত্ত্ববিদ্যায়
রূপ নিয়েছে। সংখ্যার যে একটি আধিভৌতিক (Mistrious) ভূমিকা জীবনে ও জগতে রয়েছে এ
সম্পর্কে আজ আর বিতর্কের অবকাশ নেই। তবুও পৃথিবীর দেশে দেশে সংখ্যাতাত্ত্বিকগণ
সংখ্যার আধিভৌতিক প্রভাব সম্পর্কে আরো ব্যাপক গবেষণা চালাচ্ছেন। আমি নিজেও প্রায়
৩৭ বছর যাবত এ সম্পর্কিত গবেষণায় রত থেকে জীবন ও জগতের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংখ্যার
প্রভাব দেখে যাচ্ছি। আমি কোথাও সংখ্যা সম্পর্কিত মূলনীতির ব্যতিক্রম দেখছিনা!
সংখ্যার এই অতিন্দ্রীয় প্রভাবই আধুনিক সংখ্যাতত্ত্ববিদ্যার (Modern Numerology)
আলোচ্য বিষয়।
সংখ্যাতত্ত্ববিদ্যা বস্তুতঃ
জ্যোতিষবিদ্যার চেয়েও প্রাচীন। জগতের প্রাচীনতম ধর্মগ্রন্থ সমূহে এর উল্লেখ রয়েছে।
বেদ, বাইবেল প্রভৃতিতে এর উল্লেখ দেখা যায়। পবিত্র কোরআন শরীফে সূরা সমূহের
সংখ্যায়িত লিখন পদ্ধতি দেখতে পাই। তাবিজ-কবজ লিখকগণ প্রায়শঃ সংখ্যায়ন পদ্ধতিতে
লিখে থাকেন। সংখ্যাতত্ত্বের আবিষ্কার মানুষকে জ্যোতিষবিদ্যা (Astrology) এবং
জ্যোতিষ্কবিদ্যার (Astronomy) প্রতি আকৃষ্ট করেছে। গ্রীক দার্শনিক পিথাগোরাসকে (Pythagoras
খৃষ্টপূর্ব ৫৮২-৬০৭) আধুনিক সংখ্যাতত্ত্বের জনক বলা হয়ে থাকে। অবশ্য তারও বহু
পূর্বে ধ্বংশপ্রাপ্ত ব্যাবিলনীয় সভ্যতার যুগেও এই বিদ্যার অনুশীলন হইত বলে প্রমান
পাওয়া গেছে। পিথাগোরাসের অনুসারী ফিলোলাস (Philolus), নিকোমাকাস (Nichomachus) ছাড়াও
হেরোডোটাস (Herodotus), সক্রেটিস, প্লেটো, এরিষ্টটল প্রমূখ গ্রীক পন্ডিতগন, এমনকি আইনস্টাইন
সহ অন্যান্য খ্যাতিমান পন্ডিতগন এই বিদ্যার অনুশীলন করেছেন। এবং সংখ্যার অসীম
ক্ষমতার কথা স্বীকার করেছেন। পরবর্তিকালে অধ্যাবদি বিশ্বব্যাপী অকাল্ট সায়েন্সের
অনুরাগীগণ এস্ট্রলজি, পামিস্ট্রি এবং অন্যান্য মিস্ট্রিক সায়েন্সের পাশাপাশি এই
অতিন্দ্রীয় সংখ্যাতত্ত্বেরও চর্চ্চা করে আসছেন।
সংখ্যাতত্ত্বের সাথে ফলিত
জ্যোতিষের (Applied Astrology) সম্পর্ক অতি নিবিড়। ফলিত জ্যোতিষে ১২টি রাশি আছে
এবং ৯টি গ্রহ তাদের অধিপতি (Ruling Planet)। অঙ্কের জগতে মৌলিক সংখ্যা ৯টি (১ থেকে
৯)। শূণ্য কোন সংখ্যা নয়, তবে সংখ্যার পাশে বসে তার মান বৃদ্ধি করেমাত্র। তা
পৃথিবী বা Univers এর প্রতীক। গানিতিক অঙ্ক যত বড়ই হোক তার পারস্পরিক যোগফল মৌলিক
একক সংখ্যায় রূপান্তর করা যায়। আর এই মৌলিক রূপান্তরই হচ্ছে সংখ্যাতত্ত্বের
প্রতিপাদ্য বিষয়। যেমন,- ৯৮৭৬ সংখ্যাটি পরস্পর যোগ করলে হয় ৯+৮+৭+৬=৩০। আবার ৩০ কে
পরস্পর যোগ করলে হয় ৩+০=৩। অর্থাৎ যতক্ষন না একক সংখ্যায় আসবে ততক্ষন পরস্পরকে যোগ
করতে হবে। এক সময় তা ১ থেকে ৯ এর মধ্যে আসবেই। আর এই ১ থেকে ৯ সংখ্যা হল ৯টি
প্রধান গ্রহের আধিভৌতিক বা অতিন্দ্রীয় প্রতিভূ যার প্রভাব মানব জীবনে অপরিসীম।
সংখ্যাতাত্ত্বিকগন (Numerologist)
দীর্ঘকালের পর্যবেক্ষণ ও গবেষণার মাধ্যমে প্রতিটি ব্যক্তি, বস্তু বা নামকে ইংরেজী
বর্ণমালার ক্রমানুসারে সংখ্যায়িত করে মূল্যায়ন করেছেন। প্রশ্ন দেখা দিতে পারে জগতে
অনেক ভাষা থাকতে ইংরেজী ভাষাকে বেছে নেয়া হল কেন? এর উত্তর হল,- প্রাচীনকালের
বিভিন্ন প্রতীকই মূলতঃ কালের পরিক্রমায় বিভিন্ন প্রাচীন ভাষায় সংখ্যাতত্ত্ব বর্ণিত
হলেও আধুনিক সংখ্যাতত্ত্ববিদ্যা ইংরেজীকে বেছে নিয়েছেন এর আন্তর্জাতিক আবেদনের কথা
বিবেচনা করেই। কেননা এটি একটি আন্তর্জাতিক ভাষা এবং পৃথিবীর সকল গোলার্ধে এই ভাষা
কমবেশি চর্চ্চা হয়। দ্বিতীয়তঃ অন্যান্য প্রধান ভাষা গুলোর আকার, ইকার, জের, জবর
প্রভৃতি অথবা অক্ষর সংখ্যার প্রাচূর্যে বর্ণমালা অত্যন্ত জটিল। তাই ইংরেজীকে
মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷